শেষ আঘাত

নিহার রঞ্জন বিশ্বাস

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চার দিনের রাস্ট্রীয় সফরে বাংলাদেশের পক্ষে ভারতের সাথে অনেক গুলি দ্বিপাক্ষীক চুক্তি করে এসেছেন যদিও তিস্তার পানি বন্টন চুক্তি হয়নি, বাংলাদেশের আপামর জনগণ অধির আগ্রহে অপেক্ষা করেছিল দেশে এসে আপনি আমাদের সবকিছু খোলে বলবেন, আশার বাণী শুনাবেন এবং আমরা বাংলাদেশের অগ্রগতি নিয়ে একটি আধুনিক সোনার বাংলাদেশ গঠন কল্পে নতুন নতুন স্বপ্ন দেখব, কিন্ত না, আপনি এসে তড়িঘড়ি করে হেফাজত এবং ওলামালীগ এর নেতৃবৃন্দের ডেকে জরুরি মিটিং করে বলে দিলেন- ‘সুপ্রিম কোর্টের সামনে সম্প্রতি স্থাপন করা থেমিসের মূর্তি আমিও পছন্দ করিনি।’ আমার মনে হয় হেফাজত এবং ওলামালীগের নেতারা গ্রীক দেবীর মূর্তির মাঝে হিন্দু দেবীদের ছায়া খুঁজে পেয়েছেন নয়ত হিন্দু দেবীদের সাথে তুলনা করেছেন, যাই হউক এই মূর্তিটি কারও কোন ক্ষতি করেনি, শব্দ দোষণও করেনি কিংবা কারও কাছে খাবারও চায়নি বরং ঢাকা শহরের শ্রী বৃদ্ধি করেছে । কেন সরাতে হবে এই মূর্তি ? সাথে আরও বলেছেন- ‘থেমিসের মূর্তিতে আবার শাড়ি পরিয়ে দেওয়া হয়েছে।’ এবং এই কথাও বলেছেন যে, ইতোমধ্যে এই মূর্তি স্থাপনের বিষয়টি নিয়ে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে নাকি আপনার কথা এগিয়েছে । মাননীয় নেত্রী, মূর্তি আপনার পছন্দ হয়না সেটা আগে জানতাম না, কেননা আপনাকে দেখেছি দূর্গা পূজার সময় অনেক বড় বড় মন্ডপে প্রতিমা দেখতে বেড়িয়ে ছিলেন সেই সাথে হিন্দু ধর্মাবলম্বী ব্যক্তিদের সাথে কুশল বিনিময়ও করেছেন । হাঁ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, হিন্দুদের দেবীরা শাড়ি কাপড় পড়েন শুধু তাই নয় বাঙালী রমণীরাও শাড়ি পড়তে খুবই ভালবাসেন এবং স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন । শাড়ি বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্য বাহী পোশাক, সম্ভবত ভাস্কর্য শিল্পী মৃণাল হক এই দৃষ্টিকোন থেকেই গ্রীক দেবীর মূর্তিটিকে শাড়ি পড়িয়েছেন । বোরকা বা হিজাব যদি বাংলাদেশের সংস্কৃতি হইত তাহলে হয়ত তিনি শাড়ির পরিবর্তে বোরকা বা হিজাব পড়াতেন । সুপ্রীম কোর্টের সামনে থেকে গ্রীক দেবীর মূর্তি সরানোর জন্যে আপনি নাকি প্রধান বিচারপতির সাথে আলোচনা অনেক এগিয়ে নিয়েছেন, ভাল কথা আপনার আলোচনায় আমাদের কোন আপত্তি নেই তবে একটি বিষয় খেয়াল রাখবেন মূর্তিটি যেন সত্যি সত্যি সরানো হয় । যদি কোন কারণে মূর্তিটি অপসারণ না করা হয় তাহলে সম্পূর্ণ দোষ পড়বে গিয়ে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা মহোদয়ের উপরে । আপনারা এই দেশে ৯২% আপনাদের সিদ্ধান্তই চুরান্ত সিদ্ধান্ত আর প্রধান বিচারপতি একজন সংখ্যালঘু, তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা যেন না করা হয় । কেননা একজন সংখ্যালঘু অপরাধ করলে পুরো হিন্দু জাতিকে মালাউন বলে গালাগালি দেওয়া হয় । আমরা আর কারও গালি শুনতে প্রস্তুত নই, আমরা এই স্বাধীন দেশের নাগরিক এই দেশের স্বাধীনতায় আমাদেরও অবদান আছে । “গ্রীক দেবীর মূর্তিটি আপনার পছন্দ নয়” এই কথাটা বলে আপনার প্রতি সংস্কৃত মনাদের যেই বিশ্বাস ছিলো সেই বিশ্বাসের উৎপত্তি স্থলে আঘাত করেছেন, এই ধরনের আঘাত সহ্য করার জন্যে সংস্কৃত মনারা মোটেও প্রস্তুত ছিল না । সম্ভবত এটাই শেষ আঘাত যা আপনার কাছ থেকে পাওয়াটাই শুধু বাকি ছিলো এবং অবশেষে আঘাতের ষোলকলা পূর্ণ হল । মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার জন্ম জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘরে, জন্ম থেকেই আপনি একজন রাজনীতিবিদ এবং রাজনীতি আপনি খুব ভালোই বুঝেন, দয়া করে এই দেশের সাধারণ এবং সংস্কৃত মনাদের নিয়ে কখনও রাজনীতি করবেন না, কেননা বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ এবং সংস্কৃত মনারা আপনার উপরে অনেক আস্হা রাখে । পরিশেষে একটি কথা না বললেই নয়, সুপ্রীম কোর্টের সামনে সম্প্রতি স্থাপিত গ্রীক দেবীর থেমিসের মূর্তির সাথে হিন্দুদের মূর্তির কোন সম্পর্ক নেই । গ্রীক দেবীর মূর্তি একটি ন্যায় বিচারের প্রতিক, সম্ভবত যারা ন্যায় বিচারের পরিবর্তে গায়ের জোরে সবকিছু করতে চান তারাই হয়ত গ্রীক দেবীর মূর্তি অপসারণ করার জন্যে উঠেপরে লেগেছেন । বিষয়টি ভেবে দেখা যেতে পারে ।

লেখকঃ রির্সাচ এন্ড আম্পাউয়ারমেন্ট অর্গানাইজেশন -রিও  মালদ্বীপ শাখার প্রধান। রির্সাচ এন্ড আম্পাউয়ারমেন্ট অর্গানাইজেশন – মানবতার জন্য কাজ করে।

Prof Chandan Sarkar

Disclaimer: The facts and opinions expressed within this article are the personal opinions of the author. www.HinduAbhiyan.com does not assume any responsibility or liability for the accuracy, completeness, suitability, or validity of any information in this article. Subjected to Delhi Jurisdiction only.

Share

Compare